রবীন্দ্রনাথ ও এলিয়ট : আধুনিকতার দ্বন্দ্ব ও সংলাপ

Published: 28 February 2025| Version 1 | DOI: 10.17632/byrymw4yb3.1
Contributor:
Md Siddique Hossain Md Siddique Hossain

Description

সারসংক্ষেপ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও টি. এস. এলিয়ট—বিশ্বসাহিত্যের দুই বিশিষ্ট কবি, যাঁদের সাহিত্যকর্মে যুগ ও দর্শনের স্বতন্ত্র প্রভাব লক্ষ করা যায়। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন রোমান্টিকতাবাদী ও মানবতাবাদী, তাঁর কাব্যে প্রকৃতি, প্রেম ও আধ্যাত্মিকতার গভীর অনুভূতি প্রতিফলিত হয়েছে। অপরদিকে, এলিয়ট ছিলেন কঠোর বাস্তববাদী ও প্রতীকবাদী, যাঁর সাহিত্য নগরজীবনের হতাশা, যুদ্ধোত্তর শূন্যতা ও অস্তিত্ববাদী সংকটকে প্রতিফলিত করে। তাঁদের মধ্যে প্রজন্মগত ব্যবধান থাকলেও, উভয়ের সাহিত্যেই অতীত ঐতিহ্য ও সমকালীন সমাজের প্রভাব সুস্পষ্ট। রবীন্দ্রনাথ আধুনিকতার অনুসন্ধানে ঐতিহ্যের সাথে সংযোগ রেখে কাব্যগাথা রচনা করেছেন, আর এলিয়ট ঐতিহ্যকে বিশ্লেষণ করে আধুনিক বিশ্বের সংকট চিত্রায়িত করেছেন। দুজনের সাহিত্যভাষা ও কাব্যদর্শনের ভিন্নতা তাঁদের যুগের সাংস্কৃতিক পার্থক্যের প্রতিফলন। সূচক শব্দ: রোমান্টিকতা, অ্যান্টি-রোমান্টিকতা, আধুনিকতা, যুদ্ধ-চেতনা, দর্শন, সাংস্কৃতিক পার্থক্য, সাহিত্যিক সংযোগ । ভূমিকা: সাহিত্যের ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও টি. এস. এলিয়ট দুই অনন্য নাম। যদিও তাঁদের জন্ম ও কর্মক্ষেত্র ভিন্ন, তাঁদের সাহিত্য-দর্শন দুই আলাদা ধারা গড়ে তুলেছে—একদিকে রবীন্দ্রনাথের আধ্যাত্মিকতা ও মানবিকতা, অন্যদিকে এলিয়টের বাস্তববাদ ও প্রতীকবাদ। এই দুই কবির প্রজন্মগত ব্যবধান ও জীবন-সংগ্রামের ভিন্নতা তাঁদের সাহিত্যকর্মের প্রকৃতিতে বৈপরীত্য এনেছে। রবীন্দ্রনাথ যেখানে প্রাচ্যের ধ্যানধারণা ও প্রেমের কাব্যধারা অনুসরণ করেছেন, সেখানে এলিয়ট পাশ্চাত্যের ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি যুক্ত করেছেন। তাঁদের সাহিত্য বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, বিশ্বসাহিত্যের পরিবর্তনশীল প্রবাহ কীভাবে কাব্যরূপে প্রকাশিত হয়েছে এবং কীভাবে ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি ও সাংস্কৃতিক প্রভাব একজন কবির শিল্পীসত্তাকে গঠন করতে পারে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং টিএস এলিয়ট—বিশ্বসাহিত্যের দুই উজ্জ্বল নক্ষত্র, যাঁরা তাঁদের নিজ নিজ ভাষা ও সাহিত্যধারায় গভীর প্রভাব রেখেছেন। তবে বয়সের হিসেবে এলিয়ট ছিলেন রবীন্দ্রনাথের পুত্রসম। দুজনের জন্মের ব্যবধান প্রায় তিন দশকের, আর রবীন্দ্রনাথের পুত্র রথীন্দ্রনাথের মতোই এলিয়টের জন্ম ১৮৮৮ সালে। ফলে তাঁদের মানসগঠনে যে স্বাতন্ত্র্য থাকবে, তা অনিবার্য। প্রজন্মগত এই ব্যবধানই তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি, কাব্যরুচি ও শিল্পদর্শনের পার্থক্যের অন্যতম কারণ। • রোমান্টিকতা বনাম অ্যান্টি-রোমান্টিকতা: রবীন্দ্রনাথ স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বীকার করেছিলেন যে তিনি ছিলেন রোমান্টিক কবি। তাঁর ১৯৪০ সালে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘নবজাতক’-এর ‘রোমান্টিক’ কবিতায় তিনি নির্দ্বিধায় উচ্চারণ করেন এই পরিচয়। রোমান্টিকতার যে অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য, হৃদয়বৃত্তির আধিপত্য এবং জীবন ও প্রকৃতির প্রতি সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গি, তা তাঁর কাব্যসত্তায় গভীরভাবে প্রোথিত। তবে, এলিয়ট ছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন মেরুর কবি। তিনি রোমান্টিকতার প্রতি একধরনের তীব্র বিরূপতা পোষণ করতেন। তাঁর মতে, রোমান্টিকতা ছিল অতিরঞ্জিত আবেগপ্রবণতা, যা বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে। তাই তিনি চেয়েছিলেন এক ‘Counter-romantic’ বা রোমান্টিকতার প্রতিস্পর্ধী কাব্যধারা সৃষ্টি করতে। এলিয়টের সাহিত্য ছিল রোমান্টিকতাবিরোধী এক বাস্তববাদী দৃষ্টিকোণের প্রকাশ। এই প্রসঙ্গে মডার্নিজমের আরেক দিকপাল এজরা পাউন্ডের কথা স্মরণযোগ্য। তিনিও রোমান্টিক কবিতার অতিরিক্ত আবেগকে অস্বীকার করে কবিতাকে ‘তীক্ষ্ণতর’ এবং ‘সংযত’ করার পক্ষে মত দেন। এলিয়ট তাঁর সাহিত্য-অভিযাত্রায় সেই মতবাদেরই অনুসারী হন।

Files

Steps to reproduce

• রবীন্দ্রনাথ বনাম এলিয়ট: এক তুলনামূলক বিশ্লেষণ: এই প্রসঙ্গে প্রসঙ্গান্তরে এক তুলনামূলক আলোচনা জরুরি। ইংরেজি সাহিত্যে এলিয়টের প্রভাব যেমন অপরিসীম, তেমনই বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ এক মহীরুহ। তবে তাঁদের শিল্পসত্তা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। রবীন্দ্রনাথের কাব্যশৈলীতে জীবন, প্রকৃতি ও আনন্দের যে অনুরণন ধ্বনিত হয়, এলিয়টের কাব্যে তার বিপরীতে নিরাশা, বিষাদ ও একাকীত্বের সুর প্রবল। রবীন্দ্রনাথের কবিতার মতো এলিয়টের কাব্যও দার্শনিক পরিমণ্ডলে উচ্চকিত, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের দার্শনিকতা যেখানে উজ্জ্বল, মরমি এবং জীবনের প্রতি আশাবাদী, এলিয়টের দার্শনিকতা সেখানে ক্লান্ত, সংশয়মুক্তিহীন এবং প্রায়শই নিঃসঙ্গতার প্রতিচ্ছবি বহন করে। এই পার্থক্য সত্ত্বেও, রবীন্দ্রনাথের অনূদিত এলিয়টের কবিতা কেবল দুটি ভিন্ন কাব্যসত্তার সংযোগ নয়, বরং এটি বাংলা সাহিত্যে আধুনিক ইংরেজি কবিতার এক প্রাথমিক সেতুবন্ধন। রবীন্দ্রনাথের অনুবাদের মাধ্যমেই বাংলা সাহিত্য এলিয়টের মতো এক জটিল আধুনিকতাবাদী কবিকে প্রথম আত্মস্থ করার সুযোগ পায়। যদিও পরে বুদ্ধদেব বসু, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত প্রমুখ এলিয়টের রচনাকে আরও গভীরভাবে অনুবাদ ও বিশ্লেষণ করেছেন, তবু এই ইতিহাসের প্রারম্ভে রবীন্দ্রনাথের নাম এক ঐতিহাসিক সত্য হয়ে রয়ে যায়। • রবীন্দ্রনাথ বনাম এলিয়ট: এক তুলনামূলক বিশ্লেষণ: এই প্রসঙ্গে প্রসঙ্গান্তরে এক তুলনামূলক আলোচনা জরুরি। ইংরেজি সাহিত্যে এলিয়টের প্রভাব যেমন অপরিসীম, তেমনই বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ এক মহীরুহ। তবে তাঁদের শিল্পসত্তা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। রবীন্দ্রনাথের কাব্যশৈলীতে জীবন, প্রকৃতি ও আনন্দের যে অনুরণন ধ্বনিত হয়, এলিয়টের কাব্যে তার বিপরীতে নিরাশা, বিষাদ ও একাকীত্বের সুর প্রবল। রবীন্দ্রনাথের কবিতার মতো এলিয়টের কাব্যও দার্শনিক পরিমণ্ডলে উচ্চকিত, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের দার্শনিকতা যেখানে উজ্জ্বল, মরমি এবং জীবনের প্রতি আশাবাদী, এলিয়টের দার্শনিকতা সেখানে ক্লান্ত, সংশয়মুক্তিহীন এবং প্রায়শই নিঃসঙ্গতার প্রতিচ্ছবি বহন করে।

Institutions

Bangabasi Morning College

Categories

Literature, Literature Review, Research Article, Comparative Literature

Licence