প্রেমের বহুমুখী মাত্রার অন্বেষণ: বাংলা ছোটগল্পে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অগ্রণী ভূমিকার একটি অধ্যয়ন

Published: 25 March 2024| Version 1 | DOI: 10.17632/cvvpfgcmcg.1
Contributor:
Md Siddique Hossain Md Siddique Hossain

Description

সংক্ষিপ্তসার: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ছোটগল্পের একজন অগ্রগামী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি প্রকাশ করেছেন প্রেম, সুখ দুঃখ, কষ্ট, আবেগ, দৈনন্দিন গ্রামীণ জীবনের তুচ্ছ ঘটনা। প্রেম তার ছোটগল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বিভিন্ন আইকন এবং ভালবাসার অভিব্যক্তি স্কেচ করেছেন। তিনি ভালোবাসার বিভিন্ন আঙ্গিকে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন যেমন, প্রেমের নির্জনতা, প্রেমের নীরবতা, প্রকৃতির প্রেম, ব্যর্থ প্রেম, প্রেমের প্রতি অবিশ্বাস ইত্যাদি। তিনি সর্বদা প্ল্যাটোনিক প্রেমকে সেক্সে সমর্থন না করার জন্য আলোকিত করেছিলেন। এই গবেষণাপত্রে আমি ঠাকুরের ছোটগল্প অনুসারে প্রেমের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য অনুসন্ধান করেছি। মূল শব্দ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ছোট গল্প, প্রেম।

Files

Steps to reproduce

একেবারে ভিন্ন স্বাদের একটি প্রেমের গল্প হল 'দৃষ্টিদান'। ভারতী পত্রিকায় এই গল্পটি প্রকাশিত হয়। এই গল্পে রবীন্দ্রনাথ প্রেমের এক অন্য মহিমা তুলে ধরেছেন। প্রেমের ঔদার্য্য রূপটি এখানে প্রকাশিত হয়েছে। স্বামীর আনাড়ি হাতের চিকিৎসার করণে স্ত্রী কুমুদিনীর চোখের আলো নিভে যায়। এ সত্ত্বেও স্বামীর প্রতি তার কোন ক্ষোভ বা অভিমান তৈরি হয়নি, বরং সে মনে করেছে- সে নিতান্তই তার স্বামীর সম্পত্তি তাই তার প্রতি যেকোন ধরনের নিয়ম সিদ্ধ করার পূর্ণ অধিকার তার স্বামীর আছে। কিন্তু কুমুদিনীর সন্তানহীনতা এই সামাজ শেখানো প্রেমের স্ফটিক খণ্ডে ফাটল ধরায়। সন্তানহীনতার আভিশাপ তার দাম্পত্য জীবনের সুখ শান্তিকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। কুমুদিনী স্বামীর প্রতি দূর্বল হ্রদয়নুভূতি কারণে হেমাঙ্গিনীর প্রবেশকেই মেনে নিয়েছে। অবিনাশ সামাজিক চাপে দ্বিতীয় বিবাহে রাজি হলেও কুমুদিনীর প্রতি তার ভালোবাসা ফল্গুধারার মত প্রবাহিত ছিল। সেই করণে সে দ্বিতীয়বার বিবাহের আগে সে কমনা করেছে তার প্রাণবায়ু যেন নির্গত হয়। কুমুদিনীর প্রতি অবিনাশের অব্যক্ত নিরুচ্চার প্রেম শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়। এই গল্পের মধ্যে প্রেমের যে সংজ্ঞা পাই তা হল- মানব জীবনে প্রেম কাঙ্খিত ও কাম্য হলেও নিত্য দিনের ব্যস্ততার মাঝে পড়ে এই পরম কাঙ্খিত প্রেম কোথাও যেন হারিয়ে যায়, কিন্তু সংকটের মুহূর্তে সেই হারান প্রেমই আবার ফিরে আসে নতুনত্বের স্বাদ নিয়ে-যেমনটি কুমুদিনীর জীবনে ঘটেছিল। 'নষ্টনীড়' রবীন্দ্রনাথের আর একটি অনবদ্য প্রেম কাহিনি। এখানে প্রেমের মধ্যে রয়েছে নারী মনস্তত্ত্বের এক গভীর সংকট। স্বামীর উদাসীনতার কারণে বালিকা বধু চারুর মনোজগতে প্রেম সম্পর্কে এক জটিল দ্বন্দ্বময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কিছুটা ইগোর প্রভাবে চারুর ভালোবাসার বাঁধন আলগা হয়ে যায়। প্রেমের দুর্নিবার আকর্ষণে চারু ছুটে যায় অমলের কাছে। এই প্রেম অবৈধ প্রেম। কিন্তু অমলের পিছুটান চারুকে আবার ফিরিয়ে আনে সেই নিঃসঙ্গতার জীবনে। অমলের বিদায় চরুর প্রেমের দীপ শিখাকে নিভিয়ে দিয়েছে। চারুর এই ব্যর্থ প্রেম তাকে সারা জীবন নিঃসঙ্গ করে রেখেছে। এখানে রবীন্দ্রনাথ প্রেমকে আবেগের তাড়নার ফল হিসাবে তুলে ধরেছেন। রবীন্দ্রনাথের শেষ পর্যায়ের একটি প্রেমের গল্প হল 'রবিবার'। এখানে প্রেম মানুষের প্রকৃতিকে পরিবর্তন করেছে। গল্পে বিভার প্রেমস্পর্শে নাস্তিক অভীকের অন্তরাত্মায় প্রেম ও ঈশ্বর এক হয়ে গেছে। বিভার প্রতি অভীকের প্রেম হল প্রাপ্তির মধ্যে অপ্রাপন্তির প্রতি দুর্বিবার আকর্ষণ। নারী শক্তির এক প্রবল আকর্ষণে আভীক বিভার প্রেম আকৃষ্ট হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পে প্রেমের প্রধান লক্ষ্য হল- ভালোবাসো, প্রেমে বলি হও কিন্তু কামনার রঙে রঞ্জিত করোনা। অর্থাৎ ছোটগল্পে রবীন্দ্রনাথ প্রেমকে এক বিশেষ মার্গে নিয়ে গেছেন যা ঐশি ভাবের নামান্তর। তিনি ছোটগল্পের নায়ক- নায়িকাদের প্রেমকে আর পাঁচটা সধারণ মানব-মানবীর প্রেমের মতন করে তুলে ধরলেও প্রেমের সম্ভোগকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তাই তার নায়ক-নায়িকারা একে অপরকে কাছে পেয়েও না পাওয়ার বেদনা ও নিঃসঙ্গতা অনুভব করেছে। তবে তারা কেউই প্রেমকে কলঙ্কিত করেনি, নিঃস্তব্দতার মধ্য দিয়ে তাদের ব্যর্থ প্রেমকে চাপা দিয়েছে।

Institutions

Bangabasi Morning College

Categories

Bengali Language, Research Article

Licence