জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটকে জাতীয়তার প্রসঙ্গঃ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা
Description
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক—উনিশ শতকের লেখকদের প্রায় সবাই বিষয়বস্তুর জন্য দ্বারস্থ হয়েছেন ইতিহাসের। তখন কন্টার, স্টুয়ার্ট, জেমস টেড প্রমুখের ইতিহাস গ্রন্থ বাঙালি লেখক-পাঠক সমাজে বিশেষ জনপ্রিয়। প্রকৃতপক্ষ এইসব ইতিহাস গ্রন্থে ইতিহাসের চেয়েও বেশি ছিল লেখকদের ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতির প্রকাশ। বাঙালি লেখকবৃন্দ তাদের ব্যক্তিগত মানস-প্রবণতার অনুসরণেই কেউ গ্রহণ করেছেন কন্টার আর কেউ বা জেমস টড। যেমন ভূদেব মুখােপাধ্যায় হিন্দু কলেজের ছাত্র থাকাকালে এক ইংরেজ শিক্ষকের হিন্দুদের স্বদেশানুরাগ নেই এমন উক্তিতে যারপরনাই ব্যথিত হন। এখানেই নিহিত ছিল তাঁর স্বদেশানুরাগের ভিত্তি যার প্রেরণা এই লেখকের পরবর্তীকালের সাহিত্যচর্চায় প্রভাব ফেলে। এজন্যই তিনি কন্টারের ‘দ্য মারহাট্টা চিফ’ গ্রন্থের শিবাজী চরিত্রের একনিষ্ঠ স্বদেশানুরাগের প্রাবল্য দ্বারা আকৃষ্ট হন এবং তাঁর ঐতিহাসিক উপন্যাসের বিষয় হিসেবে বেছে নেন কন্টারের ইতিহাস গ্রন্থ। অনুরূপভাবে বঙ্কিমচন্দ্রের মানস অভিরুচি তাঁকে টডের ইতিহাস গ্রন্থ অনুসরণের প্রেরণা দিয়েছে। টডের গ্রন্থে আছে রাজপুত জাতির বীরত্ব গাথা। রাজপুত জাতি শুধুমাত্র হিন্দুধর্মাবলম্বী বলেই অন্যান্য স্বাতন্ত্র্য সত্ত্বেও তার কাছে আদৃত। বঙ্কিমচন্দ্রের তীর স্বজাতি প্রেমই হিন্দুদের মহিমা কীর্তনের অনুষঙ্গে মুসলমানদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল। তিনি জাতীয়তার প্রণে বাঙ্গালিত্বের চেয়েও হিন্দুত্বের ধারণাকেই গুরুত্ব দিয়েছেন অধিক— ‘When the creative writers of the country who were Hindus were on the looked for the past glories of the nation they insinetively turned to Rajput Maharatta and Sikh history in which examples of Hindu chivalry and heroism were to be found in abundance… There they learned how Hindus and Muhammadans fought for political supremacy nand retold the stories through their creative imagination.’
Files
Steps to reproduce
কিন্তু সুমতির আপত্তিটা কেবল কি জেহেনা মুসলমান বলে দেখা দেবে? তার দাম্পত্য জীবনের শান্তিভঙ্গকারী বলে নয়? অবশ্য নাটকে সুমতি একবারও জেহেনার মুসলমানত্ব প্রসঙ্গে কথা বলেনি। বরং জগৎকেই বলতে শােনা যায় আমার কুল যাক, মান যাক, জাত যাক, সব যাক…তােমাকে আমি কিছুতে ছাড়তে পারবাে না। তবে প্রথম থেকে শেষাবধি জেহেনার মতাে আত্মবিচার বর্জিতা ‘নিপাট চরিত্রহীনা’ বাংলা সাহিত্যে খুব কমই সৃষ্টি হয়েছে। বিবাহিতা হয়েও স্বামীর প্রতি তার বিন্দুমাত্র ভালবাসা নেই, নারীর স্বাভাবিক মাতৃত্ববােধ যা স্নেহে-মমতায়-করুণায় প্রকাশিত হয় তা তার চরিত্রে অনুপস্থিত। জগৎ রায়ের প্রতি তার আসক্তিও কপট এবং ছলনাময়। জীবনের বৈধ কিংবা অবৈধ কোনাে সম্পর্ক ও কোনাে কাজটাকেই সে আন্তরিকভাবে পালন করে না। এই যুক্তিহীন অসংগতিই জেহেনা চরিত্র সৃষ্টির অন্তর্নিহিত দুর্বলতা। আর অবশ্যই এক্ষেত্রে নাট্যকারের উদ্দেশ্যমূলক মানসিকতার পরিচয় স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান।