বর্ণমালার জাগরণ

Published: 21 February 2025| Version 1 | DOI: 10.17632/ktz5tvkjy9.1
Contributor:
Md Siddique Hossain Md Siddique Hossain

Description

বর্ণমালার জাগরণ - মো: সিদ্দিক হোসেন নক্ষত্রপুঞ্জের মতো জলজ্বলে পতাকা উড়িয়ে তুমি আমার সত্তায় জাগাও আলোকপ্রভা। মমতার শ্যামলিমায় নিবিড় ঘেরা, তোমার উচ্চারণে জাগে বসন্তের মৃদু ধ্বনি। কালো রাত পেরিয়ে আসে যে প্রহর, তার প্রত্যেকটি মুহূর্তে তোমার ভাষা বুনে দেয় স্বপ্নের তাঁরি, শিশিরস্নাত শিউলি-কুসুমে তুমি হয়ে ওঠো অভিমানী শিশুর প্রথম উচ্চারণ। তুমি আমার আজন্ম সাথী, স্বপ্নের সেতু গড়েছিলে নিভৃতে, তাই তো ত্রিলোক আজ সুনন্দ জাহাজ হয়ে ভিড়ে আমারই বন্দরে। কিন্তু আজ— রক্তের শপথে লাল হওয়া তোমার পঙ্‌ক্তিগুলি কালো অক্ষরে লেখা এক গভীর হাহাকার! তোমার গায়ে উঠে বসেছে কদর্য শ্লেষ, বিকৃত উচ্চারণের জঞ্জাল। তোমাকে নিয়ে চলছে ব্যঙ্গ, বিদ্রূপ, তোমার কণ্ঠ চেপে ধরতে আসে অশালীনতার নোংরা হাত। তবু তুমি থামো না— যুদ্ধের আগুনে, তাণ্ডবের দাহনে, প্রলয়ের বর্ষায় কিংবা অনাবৃষ্টির তীব্রতায়— তুমি দাঁড়িয়ে থাকো দৃপ্ত চিত্তে। হে আমার ভাষা, তুমি আমার আঁখিতারা— তোমাকে উপড়ে নিলে কী থাকে আমার? তোমার প্রতিটি বর্ণ আমার অস্তিত্ব, তোমার প্রতিটি পঙ্‌ক্তি আমার চেতনার দীপশিখা। সেই দীপ নিভলে, আমার ভিতরেও নেমে আসবে অনন্ত অন্ধকার। ********* সাহিত্য পর্যালোচনা: “বর্ণমালার জাগরণ” ড. মোঃ সিদ্দিক হোসেন কবিতার সারসংক্ষেপ: “বর্ণমালার জাগরণ” কবিতাটি মাতৃভাষার মাহাত্ম্য, সংগ্রাম, বিকৃতি ও চেতনার বিষয়কে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে। কবিতার শুরুতে ভাষাকে জ্যোতির্ময়, প্রাণদায়ী ও আলোকস্বরূপ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ভাষার মাধ্যমে স্বপ্ন বোনা, বসন্তের স্নিগ্ধতা ও শিশুর প্রথম উচ্চারণের মতো কোমল চিত্রকল্প ব্যবহার করে মাতৃভাষার সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় ভাষার ওপর নেমে আসে বিকৃতি ও অপসংস্কৃতির কালো ছায়া। কবিতায় দেখা যায়, মাতৃভাষাকে কদর্য শ্লেষ ও বিকৃত উচ্চারণের মাধ্যমে অপমান করা হচ্ছে। ভাষার ওপর অশালীনতার দখলদারি ও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের চিত্র ফুটে উঠেছে। তবু ভাষা কখনোই হার মানে না; বরং যুদ্ধ, প্রলয় ও দুর্যোগের মধ্যেও সে দৃঢ়চিত্তে টিকে থাকে। শেষ অংশে কবি ভাষার গুরুত্বকে ব্যক্তি ও জাতির অস্তিত্বের সঙ্গে একাকার করে দেখিয়েছেন, যেখানে ভাষাহীনতার শূন্যতা ‘অনন্ত অন্ধকার’ হয়ে ওঠে। চিত্রকল্প ও অলংকার: কবিতাটি মূলত প্রতীকধর্মী ও বর্ণনামূলক, যেখানে মাতৃভাষাকে একটি জীবন্ত সত্তারূপে উপস্থাপন করা হয়েছে। - রূপক: ভাষাকে নক্ষত্রপুঞ্জের মতো উজ্জ্বল, বসন্তের মৃদু ধ্বনি, শিশিরস্নাত শিউলি-কুসুম ইত্যাদির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। - বিপরীত সঙ্কেত: ভাষার বিকৃতি ও অবমাননার বিপরীতে তার শক্তি ও সংগ্রামের রূপ তুলে ধরা হয়েছে। - উদ্দীপক চিত্রকল্প: “রক্তের শপথে লাল হওয়া তোমার পঙ্‌ক্তিগুলি” লাইনটি ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিকে উসকে দেয়। - প্রশ্নোত্তর কাঠামো: “তোমাকে উপড়ে নিলে কী থাকে আমার?”—এই ধরনের প্রশ্নের মাধ্যমে কবি ভাষার অপরিহার্যতা তুলে ধরেছেন। প্রেক্ষাপট ও বিষয়বস্তু: কবিতাটি বাংলা ভাষার প্রতি গভীর প্রেম ও দায়িত্ববোধ প্রকাশ করে। ভাষার অস্তিত্ব সংকট, বিকৃতি এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চেতনা এই কবিতার মূল ভাব। কবিতাটি ভাষা আন্দোলন, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও ভাষা সংরক্ষণের সংগ্রামের সঙ্গে সংযুক্ত। উপসংহার: “বর্ণমালার জাগরণ” একটি ভাষাপ্রেমমূলক কবিতা, যা মাতৃভাষার মর্যাদা ও সংগ্রামের বার্তা বহন করে। কবিতার শৈলী আবেগপ্রবণ এবং শক্তিশালী প্রতীক ও চিত্রকল্পের মাধ্যমে এটি ভাষার অবিনাশী শক্তিকে তুলে ধরে। ভাষার জন্য আত্মত্যাগ, তার প্রতি দায়বদ্ধতা এবং বিকৃতির ......

Files

Steps to reproduce

বর্ণমালার জাগরণ - মো: সিদ্দিক হোসেন নক্ষত্রপুঞ্জের মতো জলজ্বলে পতাকা উড়িয়ে তুমি আমার সত্তায় জাগাও আলোকপ্রভা। মমতার শ্যামলিমায় নিবিড় ঘেরা, তোমার উচ্চারণে জাগে বসন্তের মৃদু ধ্বনি। কালো রাত পেরিয়ে আসে যে প্রহর, তার প্রত্যেকটি মুহূর্তে তোমার ভাষা বুনে দেয় স্বপ্নের তাঁরি, শিশিরস্নাত শিউলি-কুসুমে তুমি হয়ে ওঠো অভিমানী শিশুর প্রথম উচ্চারণ। তুমি আমার আজন্ম সাথী, স্বপ্নের সেতু গড়েছিলে নিভৃতে, তাই তো ত্রিলোক আজ সুনন্দ জাহাজ হয়ে ভিড়ে আমারই বন্দরে। কিন্তু আজ— রক্তের শপথে লাল হওয়া তোমার পঙ্‌ক্তিগুলি কালো অক্ষরে লেখা এক গভীর হাহাকার! তোমার গায়ে উঠে বসেছে কদর্য শ্লেষ, বিকৃত উচ্চারণের জঞ্জাল। তোমাকে নিয়ে চলছে ব্যঙ্গ, বিদ্রূপ, তোমার কণ্ঠ চেপে ধরতে আসে অশালীনতার নোংরা হাত। তবু তুমি থামো না— যুদ্ধের আগুনে, তাণ্ডবের দাহনে, প্রলয়ের বর্ষায় কিংবা অনাবৃষ্টির তীব্রতায়— তুমি দাঁড়িয়ে থাকো দৃপ্ত চিত্তে। হে আমার ভাষা, তুমি আমার আঁখিতারা— তোমাকে উপড়ে নিলে কী থাকে আমার? তোমার প্রতিটি বর্ণ আমার অস্তিত্ব, তোমার প্রতিটি পঙ্‌ক্তি আমার চেতনার দীপশিখা। সেই দীপ নিভলে, আমার ভিতরেও নেমে আসবে অনন্ত অন্ধকার। ********* সাহিত্য পর্যালোচনা: “বর্ণমালার জাগরণ” ড. মোঃ সিদ্দিক হোসেন কবিতার সারসংক্ষেপ: “বর্ণমালার জাগরণ” কবিতাটি মাতৃভাষার মাহাত্ম্য, সংগ্রাম, বিকৃতি ও চেতনার বিষয়কে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে। কবিতার শুরুতে ভাষাকে জ্যোতির্ময়, প্রাণদায়ী ও আলোকস্বরূপ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ভাষার মাধ্যমে স্বপ্ন বোনা, বসন্তের স্নিগ্ধতা ও শিশুর প্রথম উচ্চারণের মতো কোমল চিত্রকল্প ব্যবহার করে মাতৃভাষার সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় ভাষার ওপর নেমে আসে বিকৃতি ও অপসংস্কৃতির কালো ছায়া। কবিতায় দেখা যায়, মাতৃভাষাকে কদর্য শ্লেষ ও বিকৃত উচ্চারণের মাধ্যমে অপমান করা হচ্ছে। ভাষার ওপর অশালীনতার দখলদারি ও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের চিত্র ফুটে উঠেছে। তবু ভাষা কখনোই হার মানে না; বরং যুদ্ধ, প্রলয় ও দুর্যোগের মধ্যেও সে দৃঢ়চিত্তে টিকে থাকে। শেষ অংশে কবি ভাষার গুরুত্বকে ব্যক্তি ও জাতির অস্তিত্বের সঙ্গে একাকার করে দেখিয়েছেন, যেখানে ভাষাহীনতার শূন্যতা ‘অনন্ত অন্ধকার’ হয়ে ওঠে। চিত্রকল্প ও অলংকার: কবিতাটি মূলত প্রতীকধর্মী ও বর্ণনামূলক, যেখানে মাতৃভাষাকে একটি জীবন্ত সত্তারূপে উপস্থাপন করা হয়েছে। - রূপক: ভাষাকে নক্ষত্রপুঞ্জের মতো উজ্জ্বল, বসন্তের মৃদু ধ্বনি, শিশিরস্নাত শিউলি-কুসুম ইত্যাদির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। - বিপরীত সঙ্কেত: ভাষার বিকৃতি ও অবমাননার বিপরীতে তার শক্তি ও সংগ্রামের রূপ তুলে ধরা হয়েছে। - উদ্দীপক চিত্রকল্প: “রক্তের শপথে লাল হওয়া তোমার পঙ্‌ক্তিগুলি” লাইনটি ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিকে উসকে দেয়। - প্রশ্নোত্তর কাঠামো: “তোমাকে উপড়ে নিলে কী থাকে আমার?”—এই ধরনের প্রশ্নের মাধ্যমে কবি ভাষার অপরিহার্যতা তুলে ধরেছেন। প্রেক্ষাপট ও বিষয়বস্তু: কবিতাটি বাংলা ভাষার প্রতি গভীর প্রেম ও দায়িত্ববোধ প্রকাশ করে। ভাষার অস্তিত্ব সংকট, বিকৃতি এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চেতনা এই কবিতার মূল ভাব। কবিতাটি ভাষা আন্দোলন, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও ভাষা সংরক্ষণের সংগ্রামের সঙ্গে সংযুক্ত। উপসংহার: “বর্ণমালার জাগরণ” একটি ভাষাপ্রেমমূলক কবিতা, যা মাতৃভাষার মর্যাদা ও সংগ্রামের বার্তা বহন করে। কবিতার শৈলী আবেগপ্রবণ এবং শক্তিশালী প্রতীক ও চিত্রকল্পের মাধ্যমে এটি ভাষার অবিনাশী শক্তিকে তুলে ধরে।

Institutions

Bangabasi Morning College

Categories

Literature Review

Licence