কালীপ্রসন্ন সিংহ : বিদ্রূপ ও ব্যঙ্গরসের সাহিত্যিক রূপায়ণ
Description
সারসংক্ষেপ: ঊনবিংশ শতকের বাংলা সাহিত্য জগতে কালীপ্রসন্ন সিংহ ছিলেন ব্যঙ্গ ও বিদ্রূপের এক উজ্জ্বল কারিগর। সমাজের প্রচলিত কুসংস্কার, ভণ্ডামি ও অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে তাঁর সাহিত্য ছিল তীক্ষ্ণ শ্লেষ ও রসবোধে পরিপূর্ণ। ১৮৪০ সালে জন্মগ্রহণকারী কালীপ্রসন্ন শৈশবে পিতৃহারা হলেও শিক্ষার ক্ষেত্রে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেন। তিনি ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’তে চলিত ভাষায় রচিত বিদ্রূপাত্মক গদ্যের মাধ্যমে সমকালীন বাবু সমাজের জীবনচিত্র তুলে ধরেন। সাহিত্য ছাড়াও তিনি সাংবাদিকতা ও নাট্যচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ‘বিদ্যোৎসাহিনী সভা’ ও ‘বিদ্যোৎসাহিনী রঙ্গমঞ্চ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলা নাট্যধারার বিকাশে ভূমিকা রাখেন। তাঁর রচনায় যেমন সমালোচনার গভীরতা ছিল, তেমনি ছিল সমাজ সচেতনতা। মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অমিত্রাক্ষর ছন্দ’-এর পক্ষে তিনি দাঁড়িয়ে সাহিত্যের নবযুগের সূচনা করেন। বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ অনুবাদক হিসেবে তিনি ‘মহাভারত’ বাংলায় অনুবাদ করেন এবং নিঃস্বার্থভাবে তা বিতরণ করেন। তবে অর্থনৈতিক সংকট ও ব্যক্তিগত দুর্ভাগ্য তাঁকে অকালে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। মাত্র ৩০ বছর বয়সে এই প্রতিভাবান সাহিত্যিকের জীবনাবসান ঘটে, তবে বাংলা সাহিত্যে তাঁর ব্যঙ্গরসাত্মক ও বিশ্লেষণধর্মী রচনা আজও অমর হয়ে রয়েছে। সূচক শব্দ: বিদ্রূপ, ব্যঙ্গরস, সমাজ-বাস্তবতা, সাহিত্যিক শৈলী, মহাভারত অনুবাদ। ভূমিকা : কালীপ্রসন্ন সিংহ ঊনবিংশ শতকের বাংলা সাহিত্যে বিদ্রূপ ও ব্যঙ্গরসের অনন্য সংযোজন ঘটিয়েছিলেন। তাঁর সাহিত্যচর্চা কেবলমাত্র রঙ্গরসাত্মক নয়, বরং সমাজ-বাস্তবতার এক তীক্ষ্ণ প্রতিচিত্র। ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ এবং মহাভারতের অনুবাদের মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন তৈরি করেন।
Files
Steps to reproduce
উপসংহার : কালীপ্রসন্ন সিংহ বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাসে ব্যঙ্গরস ও বিদ্রূপের এক অনন্য স্রষ্টা। তাঁর রচনাশৈলী সাহিত্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। অথচ আর্থিক দুর্দশা ও সমাজের অবহেলায় তিনি অল্প বয়সেই ঝরে যান, কিন্তু তাঁর অবদান বাংলা সাহিত্যে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তথ্যসূত্র: • দাস, পরেশচন্দ্র। ‘বাংলার সমাজ ও সাহিত্যে কালীপ্রসন্ন সিংহ’। • শাস্ত্রী, শিবনাথ। ‘রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ’।