পৌরাণিক দ্বৈতধর্মিতা ও সাহিত্যিক প্রতিফলন: লক্ষ্মী-সরস্বতীর সংঘাত ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতা

Published: 8 May 2025| Version 1 | DOI: 10.17632/sb9v9xsrzt.1
Contributor:
Md Siddique Hossain Md Siddique Hossain

Description

সারসংক্ষেপ: লক্ষ্মী ও সরস্বতীর পারস্পরিক সম্পর্ক বাঙালি সমাজে এক কিংবদন্তি হিসেবে প্রচলিত, যা পৌরাণিক আখ্যান এবং সাহিত্যিক কল্পনায় গভীরভাবে স্থান পেয়েছে। দেবীপ্রতিমার এই দ্বৈতধর্মিতা—একদিকে অর্থ ও ঐশ্বর্যের প্রতীক লক্ষ্মী, অপরদিকে বিদ্যা ও সৃষ্টির প্রতীক সরস্বতী—মানবজীবনের অন্তর্নিহিত সংকট এবং সামাজিক বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে। পৌরাণিক আখ্যান যেমন বেদের পুরুষসূক্ত, বিষ্ণুপুরাণ, এবং হরিবংশে এই দ্বৈতপ্রতিমার স্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায়, তেমনি মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের শ্রীকৃষ্ণবিজয় কাব্যেও লক্ষ্মী ও সরস্বতীর ঐশ্বরিক প্রভাবকে বন্দনা করা হয়েছে। সাহিত্যিক রচনাগুলিতে এই দ্বৈততার প্রতিফলন আর্থ-সামাজিক বৈপরীত্য ও জ্ঞান-সম্পদের সংঘাতের চিত্রায়ণ করেছে। পাশাপাশি, পশ্চিমা সাহিত্যের মিল্টনের *Paradise Lost* কিংবা গ্রিক দর্শনের প্লেটো ও এরিস্টটলের তত্ত্বে এই অর্থ ও জ্ঞানের দ্বৈততার অনুরণন খুঁজে পাওয়া যায়। দেবীপ্রতিমার এই দ্বন্দ্বময় উপস্থিতি কেবল পৌরাণিক আখ্যানেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি সমাজ, সংস্কৃতি ও সাহিত্যেও গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। সূচক শব্দ: লক্ষ্মী-সরস্বতী, পৌরাণিক আখ্যান, সাহিত্যিক প্রতিফলন, দ্বৈতধর্মিতা, আর্থ-সামাজিক বৈপরীত্য, জ্ঞান ও সম্পদ, সংস্কৃতি ও সমাজ। ভূমিকা: পৌরাণিক আখ্যান এবং সাহিত্যিক কল্পনায় লক্ষ্মী ও সরস্বতীর পারস্পরিক সম্পর্ক একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। লক্ষ্মী আর্থিক সমৃদ্ধি ও ঐশ্বর্যের প্রতীক, আর সরস্বতী বিদ্যা ও সৃষ্টির অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে পূজিত। এই দুই দেবীর সম্পর্ক এবং তাদের মধ্যে বিরাজমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা বহুদিন ধরেই সাহিত্য এবং সমাজের আলোচনায় এসেছে। বেদের পুরুষসূক্ত থেকে শুরু করে মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের শ্রীকৃষ্ণবিজয়, ললিতমাধব প্রভৃতিতে লক্ষ্মী ও সরস্বতীর দ্বৈতধর্মিতার পরিচয় পাওয়া যায়। সাহিত্যিক রূপান্তরের পাশাপাশি এই দ্বন্দ্ব সমাজের আর্থ-সামাজিক বৈপরীত্যকেও চিত্রিত করেছে। এর পাশাপাশি, পাশ্চাত্য দর্শনের প্লেটো এবং এরিস্টটলের তত্ত্বেও অর্থ ও জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তার দ্বৈততার অনুরূপ চিত্র লক্ষণীয়। দেবীপ্রতিমার এই দ্বৈত উপস্থাপন কেবলমাত্র ধর্মীয় আখ্যানেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা সমাজ, সংস্কৃতি .......

Files

Steps to reproduce

• দেবীসন্ধানে শোকের উন্মেষ: ‘স্মরণ’ কাব্যের ৬ নং কবিতায় রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রিয় পত্নীর উদ্দেশ্যে যে আরাধনা করেছেন, তা একাধারে বৈদিক দেবীরূপে মৃণালিনীর সন্ধান এবং ব্যক্তিগত শোকের মহৎ উত্থান। কবি বলছেন—“আজি বিশ্বদেবতার চরণ-আশ্রয়ে/ গৃহলক্ষ্মী দেখা দাও বিশ্বলক্ষ্মী হয়ে।“ এই আরাধনার মধ্যে নিহিত আছে গৃহলক্ষ্মীর সীমানা অতিক্রম করে এক বৈশ্বিক লক্ষ্মীতে পরিণত হবার গভীর আকুতি। বৈদিক দেবী লক্ষ্মীর যে সর্বব্যাপী সমৃদ্ধি ও শান্তির প্রতীক, রবীন্দ্রনাথ মৃণালিনীর মধ্যে সেই মহত্ত্বের সন্ধান করছেন। এখানে লক্ষ্মীরূপী মৃণালিনীর যে মহাজাগতিক পরিসরে উত্তরণ, তা শুধুমাত্র শোকের ভাষ্য নয়; এটি প্রকৃতপক্ষে এক আধ্যাত্মিক আরাধনার প্রতিফলন। গৃহের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে তিনি ‘বিশ্বলক্ষ্মী’ হয়ে উঠছেন, যা শুধুমাত্র এক ব্যক্তিক স্তোত্র নয়, বরং এক বিশ্বজনীন প্রেম ও শান্তির আরাধনা। • রমা-বাণীর যুগ্ম-আলোকে ধৌতবিগ্রহা: রবীন্দ্রনাথের শোকগাঁথায় মৃণালিনী দেবী ‘লক্ষ্মী’ এবং ‘সরস্বতী’—এই দুই দেবীর যুগ্ম রূপে প্রতিভাত। ৯ নং কবিতায় কবি বলছেন, “হে লক্ষ্মী, তোমার আজি নাই অন্তঃপুর।/ সরস্বতীরূপ আজি ধরেছ মধুর/ দাঁড়ায়েছ সঙ্গীতের শতদলদলে।“ মৃণালিনী এখানে কেবল গৃহবন্দিনী নন; তিনি সর্বজনীন জ্ঞানের প্রতীক সরস্বতীরূপে ভাস্বর। রবীন্দ্র-রচনার পরিসরে দেবীপ্রতিমা বরাবরই এক অলৌকিকতা ধারণ করে এসেছে। যেমনটি আমরা দেখি ‘গীতাঞ্জলি’-তে—“যাবার বেলায় ক্ষণিক তব মুখের হাসির মূল্য আমি জানি।” মৃণালিনীকে সরস্বতীরূপে কল্পনা করা এক গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও আধ্যাত্মিক উপলব্ধির পরিচায়ক, যেখানে তিনি কেবল অন্তঃপুরের লক্ষ্মী নন, বিশ্বজনীন শিক্ষার প্রতীকী মূর্তি । • অন্তহীনা দেবীমূর্তি ও রবীন্দ্র-উপলব্ধি: রবীন্দ্রনাথের কল্পনায় মৃণালিনী মৃত্যুর সীমা অতিক্রম করে এক ‘অন্তহীনা’ দেবীতে পরিণত হন। এই ধারণা মূলত উপনিষদের ‘অমৃতস্য পুত্রাঃ’—এই মহাজাগতিক চেতনার সাথে সম্পর্কিত। মৃত্যুর পরে মৃণালিনী আর কেবল গৃহলক্ষ্মী নন; তিনি বিশ্বমূর্তিতে পরিণত হয়ে ‘লক্ষ্মী-সরস্বতী’-রূপে কবির হৃদয়ে অম্লান হয়ে বিরাজ করেন। কবির ভাষায়, “সেই বিশ্বমূর্তি তব আমারি অন্তরে/ লক্ষ্মীসরস্বতীরূপে পূর্ণ রূপ ধরে।” এই পূর্ণতার অনুভবে কবির শোক প্রশান্তি লাভ করে; এটি শোকের অতিক্রম, এটি অন্তর্দৃষ্টির মহত্ত্ব। রবীন্দ্রনাথের এই ভাবনা কেবল বেদনার প্রকাশ নয়, বরং দেবীসন্ধানের এক অন্তর্গত পর্যায়। তাঁর কল্পনায় মৃণালিনী দেবীশক্তির এক মহাজাগতিক রূপে পরিগণিত, যা ‘গৃহলক্ষ্মী’ থেকে ‘বিশ্বলক্ষ্মী’, ‘সরস্বতী’ থেকে ‘মহাশক্তি’—এই সকল রূপে মূর্ত হয়ে ওঠে। এটি কবির শোকের অতিক্রম এবং শুদ্ধিকরণের এক মহৎ সোপান। • বিশ্বসাহিত্যে দেবীসন্ধানের প্রতিফলন: বিশ্বসাহিত্যের পরিমণ্ডলেও এই দেবীসন্ধান নতুন কিছু নয়। গ্রিক পুরাণে আমরা অ্যাথেনারূপী জ্ঞানদেবীর আরাধনা দেখি, যেমনটি রবীন্দ্রনাথ মৃণালিনীতে সরস্বতীর সন্ধান করেছেন। একইভাবে, শেক্সপিয়রের ‘The Tempest’-এ মিরান্ডার চরিত্র দেবীতুল্য মমত্ববোধ ও পবিত্রতার প্রতীক। এই তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে, রবীন্দ্র-চেতনায় মৃণালিনীর দেবীরূপটি আরও গভীর ও সর্বজনীন মাত্রা লাভ করে। উপসংহার: লক্ষ্মী ও সরস্বতীর দ্বৈতধর্মিতা শুধুমাত্র পৌরাণিক কল্পনাতেই সীমাবদ্ধ নয়, তা সমাজ ও সাহিত্যে বহুমাত্রিক দ্যোতনা বহন করে। এই দ্বন্দ্বময় সম্পর্ক আর্থিক সমৃদ্ধি ও বিদ্যার চিরন্তন প্রতিযোগিতার রূপক হয়ে আবির্ভূত হয়েছে। পৌরাণিক আখ্যান, সাহিত্যিক উপস্থাপনা, এবং দার্শনিক বিশ্লেষণে এই দ্বৈততার উপস্থিতি মানবজীবনের গভীর সংকট এবং সম্ভাবনার প্রতিচ্ছবি হিসেবে প্রতীয়মান হয়।.....

Institutions

Bangabasi Morning College

Categories

Literature, Research Article, Asian Literature, Indian Literature

Licence